কোথায় যেনো ঘুরতে গেলাম সেদিন মনে পড়ছে না! সিন-সিনারীও দেখতে অনেকটা শহরের চিরচেনা রূপ। খুব গরমের সময় বলে চোখের সামনে আখের রস দেখে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। ঢক ঢক করে দুই গ্লাস মেরে দিলাম। দাড়িয়েই দেখলাম বিআরটিসি এর দোতলা বাস আসলো আর আমরা গুটিকয়েক মানুষ হুড়মুড়িয়ে চড়ে বসলাম। এই বাসের উপরের তলায় বসতেই আমার ভালো লাগে, একটা রাজকীয় ভাব কাজ করে মনে মনে। রাস্তায় হালকা যানজট থাকায় চিন্তা করলাম এখানেই তো পরিচিত এক ভাইয়ের এলাকা দেখা করা যাক। যেই চিন্তা সেই কাজ, বাস থেকে নেমেই একেবারে রাস্তার সাথেই তার বাসা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে যা হয়, দেখাও হয়ে গেলো! আলাপচারিতা শেষে ওই একই বাসে ওঠার সময় খেয়াল করলাম বিআরটিসি এর এই বাসে উপরের তলায় ওঠার সিড়িটা গাড়ির মূল বডি থেকে বাম পাশে বাইরের দিকে আর দেখতে অনেকটা ক্রেন এর সিড়ির মতো। অথচ প্রথমবার ওঠার সময় এটা খেয়াল করলাম না!
নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতেই বাস থেকে নেমে জ্যামে পড়া সেই ভাইয়ের সাথে মানে যার সাথে দেখা করলাম তাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দৌঁড়াতে শুরু করলাম! কারন, ভাই বললো এখানে নাকি বেশি সময় থাকা যাবেনা তার নাকি ডেঞ্জার জোন। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে চলে গেলাম এক বাসার ছাদে। সেখানে দেখলাম শুটিং চলছে। ভাই বললো শুটিং দেখতে থাকেন আসতেছি। বুঝে নিলাম সে আমাদের সেইফ জোনে রেখে চলে গেলো। হঠাৎ করেই ডাইরেক্টর আমার হাতে বাইকের চাবি দিয়ে বললো হিরোর সাথে যেতে নাকি চাবিটা দিয়ে আসতে আমি ঠিক বুঝলাম না! পরপর তিনটি বাইক রাখা আর হিরো মাঝের বাইকে উঠবে। বাইকের সামনে দেখি হিরো নিজের জ্যাকেট আর প্যান্টের পকেটে চাবি খুঁজছে! মনেমনে ভাবলাম এমন ভাব করছে যেনো নিজের বাইক! এটাতো শুটিং এর জন্য ভাড়া করা। চাবিটা এগিয়ে দিতেই বাইক স্টার্ট দিয়ে বললো ওঠো! এই কথা বলেই টান দিলো আর পিছনে দেখলাম আরেক নায়ক কিন্ত এই ছবির ভিলেন। সে নায়ক কে পিছন থেকে ধাওয়া করবে। পাশেই দেখলাম, একটা স্টিলের সিড়ি আর শুটিং দেখতে সেটার উপরে চলে গেলাম। দেখলাম পরপর তিনটি বাইক ছাদের উপর থেকে জাম্প করে এক ফ্লোর নিচে পানির চৌবাচ্চার উপরে লাফ দিলো। ভিলেন তো আরেক ডিগ্রি উপরে সে উপর থেকে জাম্প করেই বাইক ছেড়ে দিলো। শূন্যে ভাসতে ভাসতে নিচের চৌবাচ্চায় ডুব দিলো। এদিকে হিরো তো হিরোই সে জাম্প করে নিচের ফ্লোর থেকে গড়াগড়ি আর ডিগবাজি দিতে দিতে পরের ফ্লোরে পড়ার জন্য বাইরের দিকে ঝুঁকে পড়লো। কেনো যেনো মনে হলো ডিজেল সাহেবের লোকাল বাইক ভার্সন দেখলাম। আর সহ্য করতে না পেরে বাড়ির ছাদ থেকে নেমে এলাম।
নিচে নেমেই দেখি পূর্বপরিচিত একজন মুরুব্বী দেখা হতেই এলাকার কাউন্সিলর অফিসে যাচ্ছে তার সাথে কথা বলতে বলতে সাথে নিয়ে যাচ্ছে। পিছন থেকে ওই এলাকার এক বন্ধু ডাক দিয়ে পিছুপিছু আসছে। অফিসে ঢোকার সময় সবাই শত্রভাবাপন্ন দৃষ্টিতে দেখছে আমাকে। বুঝার বাকি রইলো না সাথে আসা বন্ধু নিশ্চই এন্টি গ্রুপের! উপরে উঠতে উঠতে কথা শেষ করে সেই মুরুব্বী আবার নিচে নেমে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো। বাইরে বের হতেই বুঝলাম ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেছে। এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়েছে আর এখন আমরা ডেঞ্জার জোনে! প্রথমে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শুরু করলেও আস্তে আস্তে গতি বাড়াতে থাকি আর একটা সময় দৌড়। বিপরীত দিক থেকে আসা কারো কারো হাতে আর্মস দেখলাম বন্ধুকে গুলি করছে। দুজনেই কোনরকম দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে দুজন দুদিকে ভাগ হয়ে গেলাম। কিন্ত বিপরীত দিক থেকে আসা শত্রুদের হাতের নিশানা হচ্ছি। হঠাৎ মাথায় এলো গায়ের গেঞ্জি পরিবর্তন করতে হবে কারন, অন্তত আমাকে তো চেনার কথা না! একটা গলিতে ঢুকেই কারাগারের প্রাচীর সমান দেওয়াল আর সেটা যে কিভাবে পার করলাম আজও চিন্তা করলে মিলাতে পারিনা। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বুঝতে পারলাম অনেক মানুষ কোন উৎসবের জন্য বের হয়েছে আর সেই স্রোতেই নিজেকে মিলিয়ে নিলাম। স্রোতের সাথে সাথে চলে আসলাম গুলিস্থান মানে নিজ এলাকায়। এখানে আসার সাথেসাথেই সামনের পুলিশের গাড়ি থেকে পুলিশ নেমেই গুলি করার পজিশনে আর সামনেই সাদা পোশাকে এলাকার পোলাপাইন অস্ত্র হাতে আমার দিকে তাক করা। সামনের পিচ্চির থেকে কায়দা করে অস্ত্র নিয়েই সাইসাই করে পুলিশ থেকে শুরু করে এলাকার পোলাপাইন সবাইকে কাইত করে দিলাম। গুলি খাওয়া পুলিশ উঠেই একটা স্যালুট মারলো। বললাম, অফিসে যান আসছি। চারপাশের মানুষ হাতে তালি দিয়ে উঠলো। মনেমনে ভাবলাম, পুলিশে ঢুকলাম কবে নাকি আমি শুটিংয়ের হিরো! আর সহ্য করতে না পেরে দ্রুত পায়ে বাসায় ঢুকেই সোজা টয়লেটে। এতো চাপ সহ্য করতে না পেরে ঘুমটা ভেঙে গেলো। কি আর করার, টাঙ্কি খালি করে লেখা শুরু করলাম ভুলে যাওয়ার আগেই।
Be First to Comment