অতিথি

সকাল সকাল এক গাদা পানি মেরে ঘুমটা ভেঙ্গে দিল। বৌ যদি এমন হয় কেও বিয়ে করতে চাইবে? হাত-মুখ ধুয়ে ঘরে এসেই দেখি গিন্নি সারা গায়ে হলুদ মেখে বসে আছে। খাটের উপর রাখা জামা দেখিয়ে চোখের ইশারায় পরার আদেশ দিলেন। কিন্তু, আমি এত সকালে তৈরী হয়ে কি করবো, তুমি যেখানে হলুদ মেখে বসে আছো? আবারও বিধিবাম, বৌ এর চোখ আরও বড় হয়ে গেল। আমি ওসব তোয়াক্কা না করে ওর পেছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুড়শুড়ি দিচ্ছি। ও প্রচন্ড কষ্টে হাসি চেপে আছে। কপাল আমার, এ সুখও আর বেশিক্ষন টিকল না। “একেতো সারারাত বাঁদরামো করেছো আর এখন…..” এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘষে হলুদ মাখিয়ে দিল। উদ্দেশ্য, ওর বান্ধবীর বিয়ে। 

সাবানের জন্য আরও বেশি বাজেট রাখতে হবে। আমার হলুদ গালের দিকে সি এন জি ওয়ালা সবিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। গলা খাকারি দিয়ে বললাম “ভাই যাবেন”? আশ্চর্য ! সি এন জি ওয়ালা চলে গেল। টিস্যু কেনার জন্য দোকানে গেলাম। দোকানদার বলল “বাই আপনের কি জন্টিশ অইছে”? কিছু না বলেই টাকাটা বারিয়ে দিলাম। বাকি টাকা ফেরত দিতে দিতে দোকানদার বলল “আমার ফুপাত বাইডা দুই দিনের জন্টিশে মইরা গেছে”। 

অবশেষে বিশ মিনিটের রাস্তা সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌছালাম। বান্ধবীর বাড়িতে এসেই আমার গিন্নী তার বান্ধবীদের সাথে HUG করতে লাগলো। কিন্তু, আমারতো বাংলা হাগ খুব চাপ দিয়েছে। সিএনজির ঝাঁকিতেই এই সমস্যা। সুযোগ বুঝে টুপ করে কাজ সেরে আসলাম। নতুন কিছু মানুশের সাথে পরিচিতি পর্ব শেষে এদিক ওদিক ঘুরছিলাম। হঠাৎ, একটা পিচ্চি মেয়ে এসে একটা টিস্যু আমার হাতে দিয়ে কিছু দূরে একটা মেয়েকে দেখিয়ে চলে গেল। বুঝতে বেগ পেতে হলো না ঘটনা কি। ওই মেয়ে নিশ্চয়ই আমার পরে ওয়াশরুমে গিয়েছিলো। নতুন বাড়ি, নতুন মুখ তার মধ্যে সবাই ব্যাস্ত। ট্যাপে পানি নাই বলবো কাকে। কিন্তু, মেয়েটি মিটিমিটি হেসে টিস্যুটি খোলার ইশারা করলো। একটা মুঠোফোন নাম্বার। আগে পরে কিছু নাই। 

প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে গিন্নী এসে হাজির। এখন খাওয়া-দাওয়ার পর্ব। সে তার বান্ধবীদের সাথে খাবে। তাই তার বান্ধবীর দুটি ছোট ভাইবোনের সাথে এবং আরো কিছু অতিথিদের সাথে একটি টেবিলে বসলাম। খাবার দাবারের বেশ ভালোই আয়োজন হয়েছে। আমার বাম পাসে বসা লোকটি বেয়ারাকে বলে দুটি রোস্ট নিল। আমি আমার মত খাওয়া শুরু করলাম। এবার এক এক করে আরও দুই পদের ব্যাঞ্জন পরিবেসন করা হলো। পাসের লোকটি তার প্লেট ডুবিয়ে খাবার সংগ্রহে ব্যাস্ত। ভদ্রলোক সামাজিকও বটে। সামাজিকতার চরম পর্যায়ে উনি এবার আমার প্লেটে দিতে নিলেন। আমি শুধু শান্ত আর কঠিন দৃষ্টিতে তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার নিজের প্লেটের দিকে ইশারা করলাম। এবার উনি বেশ নড়েচড়ে নিজের খাওয়ায় মনোনিবেশ করলেন। আমি খাওয়া শেষ করে ওঠার সময় লক্ষ করলাম ভদ্রলোক আমার খালি প্লেটের দিকে তাকিয়ে নিজের আধা খাওয়া পর্বত সমান খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে ঢেঁকুর দিচ্ছেন। 

কনের স্টেজের সামনে চেয়ারে বসে আছি। আমার ডান পাসের দুজন মুরব্বি বসে বেস গল্প করছেন। তাদের বিষয় খাবারের মেনু এবং বাবুর্চির হাত। আমি শুধুই শুনলাম। স্টেজে কনের সাথে চলছে ফটোসেশন। তার পাসেই তরুণীদের সেলফি জোন। সকলেই চোখ কপালে তুলে হাঁসের মত ঠোঁট চোখা করে উপরওয়ালার পানে তাকিয়ে ছবি তুলছে। এখানে বেশিক্ষণ বসে থাকতে মোটেই ইচ্ছে করলো না। উঠে আসার সময় সেই মেয়েটি ভাইয়া বলে ডাক দিলো। আমি মুখপোড়ার মত কেবল শুনলাম। সেখানে পাশেই বয়োবৃদ্ধ মহিলারা খাওয়া শেষে পান চিবুচ্ছেন আর মেয়ের পোশাক নিয়ে তুমুল সমালোচনায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন। আর হ্যাঁ সেলফি রোগীদের সাথে আমার গিন্নীও বেশ ভালোই সময় কাটাচ্ছেন। 

ফিরে আসার গল্পটা নাহয় আরেকদিন…..

MD PARVEZ HOSSAIN Written by:

I am a Freelance Professional currently living in Dhaka. My interests range from technology to web development. I am also interested in writing.

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *